স্বদেশ ডেস্ক:
মহাসপ্তমী শেষে বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপস্থিত মহাষ্টমীতে। আজ বুধবার সারাদেশে মহাষ্টমী বিহিত পূজা, কল্পারম্ভ, কুমারীপূজা, সন্ধিপূজাসহ নানা উপাচারে দেবী দুর্গার বন্দনায় রত হবেন ভক্তরা। তবে এবার মহামারী পরিস্থিতির দিকটি মাথায় রেখে রাজধানীতে কোথাও কুমারীপূজা হবে না।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে নবপত্রিকা প্রবেশ ও সপ্তমী বিহিত পূজার মাধ্যমে শুরু হয় মহাসপ্তমীর কার্যাদি। পূজা শেষে ভক্তরা অঞ্জলি গ্রহণ করেন। এদিন ষোড়শ উপাচারে অর্থাৎ ষোলটি উপাদানে পূজা হয় দেবীর। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। এরপর দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করেন ভক্তরা। এই দিন দেবীদর্শন, দেবীর পায়ে ভক্তদের অঞ্জলি প্রদান ও প্রসাদ গ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে উৎসবের মূল পর্বের। এ ছাড়া এই দিন পুরোহিত বরণ, চ-ীপাঠ, পুরোহিতকে পূজার দায়িত্ব অর্পণসহ ছিল নানা আচার অনুষ্ঠান।
দুর্গাপূজার দ্বিতীয় দিন গতকাল মহাসপ্তমীর অঞ্জলি নিতে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ সারাদেশের ম-পগুলোয় ছিল ভক্ত পুণ্যার্থীদের ভিড়। তবে করোনা মহামারীর কারণে প্রতিটি ম-পে প্রবেশেই মেনে চলতে হচ্ছে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি। ম-প এলাকায় বন্ধ রাখা হয়েছে মেলা, আরতি প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন।
পুরাণ অনুযায়ী, দিব্যসত্তা ও সৃষ্টির অধিশ্বর ব্রহ্মার বর পেয়ে মানুষ ও দেবতাদের অজেয় হয়ে উঠেছিলেন মহিষাসুর। তাই
তাকে পরাজিত করার জন্য ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর যে মহামায়ারূপী নারী শক্তি তৈরি করেন তিনিই দেবী দুর্গা। দশভুজা দুর্গা টানা ৯ দিন যুদ্ধ করে
মহিষাসুরকে বধ করেন।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন ম-ল বলেন, সকাল সোয়া ১০টা থেকে অঞ্জলি দেওয়া শুরু হয়। ভক্তরা যে ক’বার অঞ্জলি নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ততবারই তাদের অঞ্জলি দেওয়া হয়েছে। তবে সন্ধ্যায় আরতির পর পূজা ম-প বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে, সেটা আমরা করতে পারছি না। কারণ প্রচ- গরমের মধ্যে দিনের বেলায় লোকজন আসতে পারে না। সন্ধ্যায় পরিবেশ একটু ঠা-া হলে লোকজন ম-পে আসতে শুরু করেন। এ ছাড়া দিনে রাস্তায় যানজটের কারণে কিছুটা বিঘœ হয় লোকজনের ম-পে আসা। তাই আমরা রাত ১০টা পর্যন্ত ম-প খোলা রাখছি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত জানান, এ বছর সারাদেশে ৩২ হাজার ১১৮টি ম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর সারাদেশে দুর্গাপূজার ম-পের সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার ২১৩টি। এ বছর ঢাকা মহানগরে পূজা হচ্ছে ২৩৭টি ম-পে। এর মধ্যে সূত্রাপুর থানায় সবচেয়ে বেশি ২৫টি ম-প, কোতোয়ালি থানায় ২১টি, ওয়ারীতে ১৬টি, গে-ারিয়ায় ১৪টি, হাজারীবাগে ১৩টি, তুরাগে ১২টি, বাড্ডায় ১০টি, বনানীতে ৯টি, মোহাম্মদপুরে ৯টি, দারুসসালাম ও গাবতলীতে ৮টি, ডেমরায় ৮টি এবং তেজগাঁও থানায় ৬টি ম-পে পূজা উদযাপন করা হচ্ছে।
এদিকে জনসমাগম এড়াতে আজ অষ্টমী তিথিতে ঢাকায় হচ্ছে না কুমারীপূজা। মূলত এবার উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখতে নির্দেশনা দিয়েছে পূজা উদযাপন পরিষদ। হচ্ছে না কোনো আরতি প্রতিযোগিতা, বসবে না মেলা। দশমীতে হবে না বিজয়ার শোভাযাত্রাও। তাই এবারের দুর্গোৎসবকে দুর্গাপূজা হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। এবার প্রতিমাগুলো অন্যান্য বছরের মতো ঢাকেশ্বরী মন্দির এলাকায় জড়ো করা হবে না। প্রত্যেক ম-প থেকেই প্রতিমা নিয়ে বিসর্জন দেওয়া হবে। আগে প্রতি ম-প থেকে ২-৩টি ট্রাকে করে নানা বাদ্য-বাজনা সহযোগে দুর্গা প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হতো বিসর্জনের জন্য। এবার একটি ট্রাকে করে বাড়তি লোক না নিয়ে ম-প কর্তৃপক্ষগুলোকে প্রতিমা বিসর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।